শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস


শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালি সাহিত্যিকদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক পঠিত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তার জীবদ্দশায় তিনি বহু ছোট গল্প এবং উপন্যাস লিখেছেন। তার লেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “রামের সুমতি”, “মহেশ”, “অভাগীর স্বর্গ” ইত্যাদি। অন্যদিকে “পরিণীতা”, “পল্লীসমাজ”, “বৈকুণ্ঠের উইল”, “চরিত্রহীন”, “শ্রীকান্ত”, “দেবদাস”, “গৃহদাহ”, “পথের দাবী” ইত্যাদি কালজয়ী জনপ্রিয় উপন্যাসের স্রষ্টা তিনি। বাংলা ভাষায় লেখা তার উপন্যাস ও গল্পগুলি বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলা এবং হিন্দি মিলিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ও গল্পকে কেন্দ্র করে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী ও উপন্যাস

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চাকরির পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন লেখক। প্রতিটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে। তাই তার এবং তার উপন্যাস সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। এখানে আমরা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী ও তার কিছু সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : জীবনী ও উপন্যাস

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: জীবন ও সাহিত্যকর্ম

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কিশোর ও প্রথম জীবন কাটে ভাগলপুরে মাতুলালয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি দেবানন্দপুরের হুগলী ব্রাঞ্চ স্কুল ও ভাগলপুরের দুর্গাচরণ এ এম ই স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর টিএম জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ইন্ট্রান্স পাশ করার পর, একই কলেজে এমএ শ্রেণীতে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তাঁর শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। অধ্যয়নে বিরতি ঘটার পর শরৎচন্দ্র বনিলি ইস্টেটের সেটেলমেন্ট অফিসার সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদক এবং বার্মা রেলওয়ের হিসাব দপ্তরের কেরানি পদে চাকরি করেন।

এক সময় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সন্ন্যাসী দলে যোগ দেন এবং গান ও নাটকে অভিনয় করেন। তিনি কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি কয়েক সাল বাদে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর প্রথম উপন্যাস “বড়দিদি” ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাহিত্য জগতে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তিনি একে একে “বিন্দুর ছেলে ও অন্যান্য”, “পরিণীতা”, “বৈকুণ্ঠের উইল”, “পল্লীসমাজ”, “দেবদাস”, “চরিত্রহীন”, “নিষ্কৃতি”, “শ্রীকান্ত”, “দত্তা”, “গৃহদাহ”, “দেনাপাওনা”, “পথের দাবী”, “শেষ প্রশ্ন” ইত্যাদি গল্প উপন্যাস এবং “নারীর মূল্য”, “স্বদেশ ও সাহিত্য” প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলির মধ্যে “শ্রীকান্ত”, “চরিত্রহীন”, “গৃহদাহ”, “দেনাপাওনা” এবং “পথের দাবী” বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর “পথের দাবী” উপন্যাসটি বিপ্লববাদীদের প্রতি সমর্থনের অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে। শরৎচন্দ্রের মৃত্যুর পর “শরৎচন্দ্র ও ছাত্রসমাজ”, “ছেলেবেলার গল্প”, “বাবা”, “শেষের পরিচয়”, “শরৎচন্দ্রের গ্রন্থ-বলি” এবং “শরৎচন্দ্রের অপ্রকাশিত রচনাবলী” প্রকাশিত হয়।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের একজন অমর কথাসাহিত্যিক। তাঁর উপন্যাসের মূল বিষয় পল্লীর জীবন ও সমাজ। ব্যক্তি মানুষের মন পল্লীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার আঘাতে কতটা রক্তাক্ত হতে পারে, তারই রূপচিত্র এঁকেছেন তিনি তাঁর রচনায়। যদিও তাঁর উপন্যাসে ব্যক্তিবর্গের ছবি শেয়ার ও মুক্তির সর্বদাই সমাজ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় বলে তাঁকে রক্ষণশীলও বলা হয়ে থাকে, তবে নারীর প্রতি সামাজিক নির্যাতন ও তাঁর সংস্কারবন্দি জীবনের রূপায়ণে তিনি বিপ্লবী লেখক। বিশেষত গ্রামের অবহেলিত ও বঞ্চিত নারীর প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধা তুলনাহীন। সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার ও অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। কাহিনী নির্মাণে অসামান্য কুশলতা এবং অতি প্রাঞ্জল ও সাবলীল ভাষা তাঁর সাহিত্যকর্মের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির প্রধান কারণ।

বাংলাসহ ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে বহু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে এবং সেগুলি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে, যেমন “দেবদাস”, “শ্রীকান্ত”, “রামের সুমতি”, “দেনাপাওনা” ইত্যাদি। শরৎচন্দ্র চিত্রনাট্যেও দক্ষ ছিলেন। তাঁর অতি মহাশ্বেতা অয়েল পেইন্টিং একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম। সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কুন্তলীন পুরস্কার, জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্যপদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি লাভ করেন। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার পার্ক নার্সিংহোমে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়।

বড়দিদি: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস

শরৎচন্দ্র উপন্যাস বড়দিদি

উপন্যাসের প্রকাশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস “বড়দিদি”। ১৯১৩ সালে এটি বই আকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। শরৎচন্দ্র যখন কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, তখন তিনি ভাগলপুর শহরে বিভূতিভূষণ ভট্টের বাড়িতে একটি সাহিত্যের আড্ডা বসাতেন এবং সেই আড্ডার জন্য অনেকগুলো লেখা লিখতেন। সেই লেখাগুলি তাঁর বাল্যবন্ধু সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় কলকাতায় নিয়ে যান। যখন লেখাগুলোর পাণ্ডুলিপি ফেরত দেওয়া হচ্ছিল, তখন সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় “বড়দিদি” উপন্যাসটি লিখে রাখেন।

পরবর্তীতে, সৌরীন্দ্রমোহন যখন ভারতী পত্রিকার দায়িত্ব পান, তখন তিনটি ভাগে, অর্থাৎ বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় মাসের তিনটি খণ্ডে এটি ভারতী পত্রিকায় প্রকাশ করেন। প্রথম দুই ভাগে তিনি শরৎচন্দ্রের নাম উল্লেখ না করায়, উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কিনা তা নিয়ে জনমনে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়। তৃতীয় খণ্ডে তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করেন। এরপর ১৯১৩ সালে ফণীন্দ্রনাথ পাল, যমুনা পত্রিকার সম্পাদক, বইটি গ্রন্থ আকারে প্রথম প্রকাশ করেন, যদিও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তা করতে নিষেধ করেছিলেন। এই হল “বড়দিদি” উপন্যাসের প্রকাশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

উপন্যাসের মূল কাহিনী

সুরেন্দ্রনাথ এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাঁর পিতার নাম রায় মহাশয়, একজন বড় উকিল, এবং তাঁর মাতা বিমাতা। সুরেন্দ্রনাথ এমএ পাস করেছেন, তবে তাঁর সমস্ত পড়াশোনা এবং জীবনের প্রতিদিনের কার্যক্রম তাঁর বিমাতার তত্ত্বাবধানে চলত, যা পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে খাবার, ঘুম ইত্যাদি সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত। তিনি নিজে থেকে নিজের জীবন পরিচালনা করার মতো কিছুই শিখতে পারেননি।

উচ্চতর পড়াশোনার জন্য সুরেন্দ্রনাথ লন্ডনে যেতে চান। এই প্রস্তাবটি তিনি রায় মহাশয়ের কাছে নিয়ে যান, কিন্তু তাঁর মা মনে মনে চান না যে তাঁর একমাত্র ছেলে বিদেশে যায়। তিনি প্রস্তাবটি হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেন, কারণ সুরেন্দ্রনাথ একাকী কিছুই করতে পারে না। ফলে রায় মহাশয় সুরেন্দ্রনাথের বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে দেন। অভিমানে সুরেন্দ্রনাথ কলকাতায় চলে যান। কিছুদিন একাকী ঘোরাফেরা করার পর, যখন তাঁর টাকাপয়সা শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি কিছু কাজ করার প্রয়োজন বোধ করেন।

একজন কর্মজীবী মানুষকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি সুরেন্দ্রনাথকে ব্রজ রাজ লাহিড়ীর বাড়িতে পাঠান। ব্রজ রাজ লাহিড়ী পূর্ববঙ্গের একজন জমিদার ছিলেন। দুই-তিনদিন দরজা থেকে ফিরে আসার পর, একদিন সাহস করে সুরেন্দ্রনাথ প্রবেশ করেন। ব্রজ রাজ লাহিড়ী তাঁকে দেখে ভদ্রলোক ও শিক্ষিত মনে করে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কী করতে পারেন। সুরেন্দ্রনাথ জানান যে তিনি কিছুটা পড়াশোনা জানেন এবং পড়াতে পারবেন। তখন ব্রজ রাজ লাহিড়ী তাঁকে তাঁর ছোট মেয়ে প্রমিলাকে পড়ানোর দায়িত্ব দেন। প্রমিলা খুবই ছোট।

সুরেন্দ্রনাথের একটি ব্যবস্থা হয়ে যায়। এবার তিনি প্রমিলাকে পড়ানো শুরু করেন। বইপত্র নিয়ে এসে বসেন এবং নিজেও পড়েন। অংকের সমাধান করেন। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকে। সুরেন্দ্রনাথ দেখলেন যে সেখানে তার কোনো অসুবিধা নেই। যা কিছু চাওয়া হোক না কেন সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে। কারণ সেখানে একজন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে সবাই বড়দিদি বলে ডাকত। তিনি সবকিছু তদারকি করতেন। বড়দিদি লক্ষ্য করলেন যে সুরেন্দ্রনাথ খুবই উদাসীন। তার মনে সন্দেহ হলো যে সুরেন্দ্রনাথ হয়তো কোনও বড়লোকের ছেলে এবং শিক্ষিত।

মাধবী কে? মাধবী ব্রজ রাজ লাহিড়ীর বড় মেয়ে। তিনি এখন বিধবা, তার বিয়ে হয়েছিল যোগেন্দ্রনাথের সঙ্গে, যিনি মারা গিয়েছেন। মাধবী এখন বিধবা এবং তার হাতে বাড়ির সকলের দায়িত্ব।

মাধ্যমিকে সবাই মাধবীকে সম্মান করে বড়দিদি বলে ডাকে। মাধবীর বান্ধবী মনোরোমার সঙ্গে চিঠিপত্র আদানপ্রদান করে সুরেন্দ্রনাথ সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন এবং একটু রসিকতা করেছিলেন। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর মাধবী দেখলেন যে সুরেন্দ্রনাথ এতই উদাসীন যে কে তার সবকিছুর যোগান দেয় সেটি জানতে আগ্রহী নয়। তখন মাধবী সিদ্ধান্ত নিলেন কিছুদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যাবেন। মাধবী প্রায় এক মাসের জন্য কোথাও চলে যান এবং সুরেন্দ্রনাথকে দেখাশোনার দায়িত্ব কাউকে দিয়ে যাননি।

ফলে সুরেন্দ্রনাথের কোন কিছুরই ঠিক ছিল না। এই এক মাসে সুরেন্দ্রনাথ কয়েকবার প্রমিলাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে বড়দিদি কোথায় গেছেন। প্রমিলা বলেছে যে তিনি বেড়াতে গেছেন। এরপর যেদিন বড়দিদি ফিরে আসেন, সুরেন্দ্রনাথ প্রমিলাকে বলেন, “চল আমরা দেখে আসি বড়দিদিকে।” হুট করে বড়দিদির ঘরে চলে যায় তারা। এতে বড়দিদি মাধবী খুবই বিব্রত হন এবং ঘোমটা টেনে দেন। প্রমিলা বুঝতে পারে ছোট হলেও সে চলে আসে। এভাবে কিছুদিন চলার পর শিবচন্দ্র, মানে বড়দিদি শিবচন্দ্রকে জানায়। শিবচন্দ্র হচ্ছেন বড়দিদির বড় ভাই অর্থাৎ ব্রজ রাজ লাহিড়ীর বড় ছেলে।

শিবচন্দ্র দেখলেন যে সুরেন্দ্রনাথ সবসময় কোনও না কোনও বই পড়ছে। তিনি একটি উচ্চতর লেভেলের বই নিয়ে দেখালেন। এভাবে চলতে থাকে। একদিন মাধবী প্রমিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, “দেখি তো স্যার তোমাকে কি পড়ায়?” দেখা গেল প্রমিলা আসলে কিছুই পড়েনি, আগে যা পড়েছিল তাও ভুলে গেছে। বিষয়টি বাবার সাথে আলোচনা করলেন মাধবী। পরে একদিন মাধবী সুরেন্দ্রনাথকে বলেন, “আপনি তো প্রমিলাকে পড়ান না, কারণ প্রমিলা বলেছে আপনি শুধুই নিজে পড়েন।” সুরেন্দ্রনাথ বললেন, “ভালো লাগে না।” তখন মাধবী বললেন, “তাহলে আপনি আছেন কেন?”

এ কথা শুনে সুরেন্দ্রনাথ ভাবলেন, “আসলেই তো আমি আছি কেন?” তিনি বুঝলেন যে এখানে থাকা আর সম্ভব নয়। সবকিছু রেখে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন নিরুদ্দেশে। কলকাতা শহরে ঘুরে ফিরতে ফিরতে ক্লান্ত হয়ে গেলেন। একদিন একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হলেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হলেন। ডাক্তার তাকে তার আত্মীয় স্বজনের ঠিকানা দিতে বললেন। সুরেন্দ্রনাথ তার বাবার ঠিকানা এবং বড়দিদির ঠিকানা দেন।

ডাক্তার, বড়দিদি অর্থাৎ জমিদারের প্রতিবেশী, জমিদারকে দেখতে যান। জমিদার জানতে পারেন সুরেন্দ্রনাথ এক ধনী ও শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। ব্রজলাল লাহিড়ী তার মেয়েকে বলেন যে সুরেন্দ্রনাথ তাকে দেখতে চেয়েছেন, তবে মাধবী আসেন না। তবুও মাধবী সন্তুষ্ট হন যে সুরেন্দ্রনাথ বেঁচে আছেন।

অনেক দিন কেটে যায়। সুরেন্দ্রনাথ বাড়ি ফিরে আসেন। রায়মহাশয়ের মৃত্যু হয় এবং সুরেন্দ্রনাথ তার মাতা মহের জমিদারি দোহিত্র সূত্রে পান। লালতা গাঁয়ের জমিদার হন সুরেন্দ্রনাথ। তার জমিদারির মেনেজারি করেন মধুরনাথবাবু, যিনি একজন অত্যাচারী ও ঘুষখোর। সুরেন্দ্রনাথের উদাসীনতার কারণে মধুরনাথবাবুই সবকিছু চালান এবং প্রজাদের উপর অত্যাচার করেন। সুরেন্দ্রনাথকে শান্তি দেবীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। সুরেন্দ্রনাথ আহত থাকায় তিনি চাপ নিতে পারেন না। মধুরনাথবাবু তাকে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা করেন। অলোকেশী নামক বাইজীকে নিয়ে মধুরনাথবাবু বাগান বাড়িতে আমোদ-ফুর্তি করেন।

মাধবীর বাড়িতেও ব্রজ রাজ লাহিড়ীর মৃত্যু হয় এবং জমিদারি চলে যায় শিবচন্দ্রের হাতে, ব্রজ রাজ লাহিড়ীর বড় ছেলে। শিবচন্দ্র বিয়ে করে এবং তার স্ত্রী সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। মাধবীর হাত থেকে চাবি নিয়ে নেওয়া হয় এবং এখন আর মাধবী কারোর আগ্রহের পাত্র নয়। মাধবী তখন বলে যে সে তার শ্বশুর বাড়িতে ফিরে যেতে চায়। শিবচন্দ্র অবাক হয়ে যান, কারণ সেখানে তো কেউই নেই। তবুও মাধবী সিদ্ধান্ত নেয় যে সে তার শ্বশুর বাড়িতে যাবে। সেখানে তার একজন ভাগ্নে আছে, যার নাম সন্তোষকুমার। মাধবী সিদ্ধান্ত নেয় যে সে জায়গা জমি উদ্ধার করে সন্তোষকুমারকে দিতে চেষ্টা করবে।

মাধবী চলে যায় যোগেন্দ্রনাথের বাড়ি, যিনি তার শ্বশুর। যোগেন্দ্রনাথের বাবা রামতনু শান্যাল এবং তার বন্ধু চাটুয্যে মহাশয় রামতনু শান্যালের সব জায়গা জমি দখল করে ভোগ করছিলেন। বড়দিদি গিয়ে হাজির হওয়ায় চাটুয্যে মহাশয়ের অসুবিধা হয়।

চাটুয্যে মহাশয় জমি দখল করার জন্য মধুরনাথবাবুর সাথে ঘুষ লেনদেন করে সব সম্পত্তি নিজের নামে করার পরিকল্পনা করেন এবং তা সফল হয়। রামতনু শন্যালের বাড়ি নোলতা গ্রামে, যা সুরেন্দ্রনাথের জমিদারির অন্তর্গত। মাধবী জমিদারের কাছে যেতে চান, কিন্তু জানতেন না যে সুরেন্দ্রনাথই এই এলাকার জমিদার। পাড়ার লোকেরা বলে যে জমিদার খুবই খারাপ এবং তার নারীর প্রতি আকর্ষণ আছে। মাধবী তখন ২২ বছরের সুন্দরী। সেখানে যাওয়া ঠিক হবে না। উপায়ান্তর না দেখে মাধবী জায়গা জমি ছেড়ে ভাগ্নে সন্তোষকুমারকে নিয়ে নৌকায় রওনা দেন।

সুরেন্দ্রনাথ যখন কাগজপত্র দেখছিলেন, তখন তিনি দেখলেন যে এক বিধবাকে তার জায়গা জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি মধুরনাথকে ডেকে পাঠান এবং জিজ্ঞাসা করেন। মধুরনাথ বিব্রত হয়। সুরেন্দ্রনাথ তখন দেখেন যে বিধবার নাম মাধবী, বুঝতে পারেন যে সে হয়তো বড়দিদি হবে। পরে সুরেন্দ্রনাথ প্রথমে ঘোড়ায় চড়ে রামতনু শান্যালের বাড়ি যান এবং দেখেন যে বাড়িতে কেউ নেই। জানতে পারেন যে বড়দিদি নৌকায় রওনা হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটি নৌকা দেখেন এবং বড়দিদি বলে ডাক দেন। বড়দিদি সুরেনের ডাকে চিনতে পারেন। মাঝিদের বলেন দ্রুত পৌঁছে দিলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। সকালে তারা সুরেন্দ্রনাথের বাড়িতে পৌঁছান।

সুরেন্দ্রনাথ বলেন, “দেখ বড়দিদি, তুমি একবার আমাকে তোমার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে, আর আজ আমি তোমাকে তোমার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলাম।” একথা শুনে বড়দিদি অজ্ঞান হয়ে যান। যখন তার জ্ঞান ফিরে, তখন সারা বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে। অর্থাৎ, সুরেন্দ্রনাথ হয়তো মারা গেছেন।

পথের দাবী: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস পথের দাবি

আলোচ্য ’পথের দাবী’ রচনাটি প্রকৃতপক্ষে একটি উপন্যাস। বঙ্গবাণী মাসিক পত্রিকায় ১৯২২ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ’পথের দাবী’ উপন্যাসটি প্রকাশ করেন। পরে, ১৯২৬ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। আলোচ্য অংশটি সমগ্র উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত এবং সম্পাদিত রূপ। ’পথের দাবী’ উপন্যাসের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদের প্রায় শেষ দিক থেকে সপ্তম পরিচ্ছেদের শেষ দুটি অনুচ্ছেদ বাদ রেখে বাকি অংশটি নিয়ে গঠিত হয়েছে আলোচ্য পাঠ্যাংশটি।

’পথের দাবী’ বই আকারে প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে জনমানসে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলার বিপ্লবীদের যথেষ্ট মেলামেশা ছিল, ফলে এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সব্যসাচীর মধ্যে তিনি বিপ্লবীদের একটি রূপ তৈরি করেছিলেন। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের আশঙ্কা ছিল উপন্যাসের সব্যসাচী চরিত্রটি বাস্তবের বহু বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করতে পারে এবং সংগ্রামের বীজ বপন করতে পারে, যা ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিপদজনক। এই সন্দেহের বশে ১৯২৭ সালে ’পথের দাবী’ বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ততদিনে এই বইয়ের প্রায় চার হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেছে। সরকারের চিফ সেক্রেটারি বইটিকে ’বিষময়’ আখ্যা দিয়েছিলেন, আর কলকাতার পাবলিক প্রসিকিউটর একে সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বলে জানিয়েছিলেন। আদালতে একটি বই এভাবে বাজেয়াপ্ত করার প্রতিবাদ করেছিলেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু এবং হরেন্দ্র নাথ চৌধুরী।

পরবর্তীকালে, ১৯৭৭ সালে “পথের দাবী” উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয় “সব্যসাচী” নামে, যেখানে সব্যসাচী ভূমিকায় উত্তম কুমারের অভিনয় আজও স্মরণীয়।

উপন্যাসের এই বিশেষ পর্বের আগে, আমরা জানতে পারি যে এমএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষিত হিন্দু বাঙালি অপূর্ব হালদার, তার কলেজের অধ্যক্ষের সাহায্যে রেঙ্গুনের বোথা কোম্পানিতে চাকরি পায় এবং সেই মতো বাংলাদেশ থেকে পাচক তেওয়ারীকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসে। তারা জোসেফ সাহেবের বাড়িতে ওঠে এবং সেখানেই খ্রিস্টান মেয়ে ভারতীর সঙ্গে পরিচয় হয়। এই অংশে আগেই আমরা জানতে পারি যে অপূর্বর পরিবারের দাদারা নাস্তিক এবং ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও নিয়মনিষ্ঠ নন।

অন্যদিকে, অপূর্বর পরিবারে অপূর্ব প্রচণ্ড নিয়মনিষ্ঠ, মায়ের অনুগত এবং বিজ্ঞান নিয়ে পড়েও সে টিকি রাখে মাথায়। মারাঠি ব্রাহ্মণ পেশায় একাউন্টেন্ট রামদাস তলওয়ারকারের সঙ্গে অপূর্বর হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের পদস্থ অফিসার নিমাইবাবুর কাছ থেকে বিপ্লবী সব্যসাচী সম্পর্কে জানতে পারেন। নিমাইবাবু অপূর্বর বাবার চাকরি করেছিলেন, তাই অপূর্বর প্রতি অল্প হলেও বিশেষ যত্নবান ছিলেন। সব্যসাচীর কথা শুনে অপূর্বর শ্রদ্ধার সীমা থাকে না।

ইতিমধ্যে, সব্যসাচীর আসার খবরে স্টিমার থেকে কয়েকজন বাঙালিকে সন্দেহজনক মনে করে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সব্যসাচীকে দেখার কৌতূহলেই অপূর্ব নিমাইবাবুর সঙ্গে রেঙ্গুন থানায় যায়, যদিও অন্য একটি কারণে থানায় যাচ্ছিল। আগের দিন তার নিজের ঘরে চুরি হয়ে যায় এবং সে ভারতীকে সন্দেহ করে থানায় যেতে চেয়েছিল। পথে নিমাইবাবুর সঙ্গে দেখা হওয়ায় সব্যসাচীর বিষয়ে জানতে পারে। আলোচ্য পাঠ্যাংশের সূচনা ঠিক এই ঘটনার পর থেকে।

পাঠ্যাংশে আমরা দেখি রেঙ্গুন থানায় বর্মা অয়েল কোম্পানির কাজ ছেড়ে আসা ৬ জন বাঙালির নাম ঠিকানা জেনে নিয়ে এবং সঙ্গের জিনিসপত্র পরীক্ষা করে জগদীশবাবু তাদের ছেড়ে দেন। তারপর সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সামনে হাজির করা হয়, যিনি পলিটিকাল সাসপেক্ট। তার বয়স ৩০-৩২ এর কম নয়, চোখের দৃষ্টি অদ্ভুত রকমের এবং সামান্য কাশিতে এমন হাঁপানি হচ্ছিল যে দেখে মনে হচ্ছিল তার আয়ু ক্ষণস্থায়ী। তার পোশাক আশ্চর্য রকমের যা দেখে নিমাইবাবুর কখনোই সন্দেহজনক বলে মনে হয় না। তিনি ভাবেন সব্যসাচীর রুচির সঙ্গে এই লোকটির রুচির কোনও মিল নেই।

লোকটির নাম গিরিশ মহাপাত্র। তল্লাশি করে তার কাছে পাওয়া যায় এটি টাকা, গণ্ডা ছয়েক পয়সা, একটি লোহার কম্পাস, ফুট-রুল, দেশলাই, বিড়ি ও গাঁজার কল্কি। নিমাইবাবু সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে তাকে মুক্তি দেন এবং রাতের মেইল ট্রেনের প্রতি নজর দেন, কারণ তার কাছে খবর আছে যে সব্যসাচী বর্মায় এসেছেন।

অপূর্বর সঙ্গেই গিরিশ মহাপাত্র তার ভাঙ্গা টিনের তোরঙ্গ ও ময়লা বিছানা নিয়ে বেরিয়ে যায়। অপূর্ব ও রামদাস তলওয়ারকর একসঙ্গে অফিসের টিফিনের সময় অপূর্ব তার ঘরের চুরির ঘটনা রামদাসকে জানায় এবং গিরিশকে নিয়ে দুজনে ঠাট্টা করে। অপূর্ব জানায় যে শিকারির মতো যাকে নিমাইবাবু খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি দেশের থেকে বেশি আপনজন, কারণ দেশের থেকে আত্মীয় আপন কেউ নেই অপূর্বর কাছে।

সেদিনই অফিসের বড় সাহেবের থেকে অপূর্ব একটি টেলিগ্রাম পায়, যাতে বলা হয় যে ভামো, ম্যানহালে, শোএবো, মিকথিলা ও প্রোম এর অফিসে গণ্ডগোল চলছে এবং অপূর্বকেই ভামোতে সত্বর যেতে হবে। অপূর্ব রাজি হয়ে যায়। স্টেশনে তাকে বিদায় জানাতে তলওয়ারকর আসে এবং হঠাৎ করেই সেখানে গিরিশ মহাপাত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। কয়েকটি কথা বলে গিরিশ বিদায় নিয়ে চলে যায়। যদিও উপন্যাসের পরবর্তী অংশে জানা যায় যে গিরিশ মহাপাত্র ছিল ছদ্মবেশী সব্যসাচী। ট্রেন ছাড়ার পর অপূর্ব ভামোর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

অপূর্ব প্রথম শ্রেণীর যাত্রী ছিল। সন্ধ্যার পর আহ্নিক শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিল অপূর্ব। সে ভেবেছিল কেউ তাকে বিরক্ত করবে না। কিন্তু পুলিশের লোকেরা বারবার তার ঘুম ভাঙালে সে প্রতিবাদ করে। এতে বর্মার সাব-ইন্সপেক্টরের কাছে তাকে আবার অপমানিত হতে হয়। এই ঘটনাতেই পাঠ্যাংশের সমাপ্তি ঘটে।

এরপর উপন্যাসের কাহিনী ত্রিশটি পরিচ্ছেদ জুড়ে বিস্তারিত হয়েছে। উপন্যাসে আমরা সব্যসাচীকে ডাক্তার হিসেবেই পাব, অপূর্ব এবং ভারতীর কাহিনীর সঙ্গে সঙ্গেই আসবে সব্যসাচীর ‘পথের দাবী’ নামক গুপ্ত সংগঠনের কথা। এই সংগঠন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে স্বাধীনতা আন্দোলনে অস্ত্র সরবরাহ করা এবং ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জাগিয়ে তোলার কাজ করত।

সবমিলিয়ে পুরো উপন্যাসটি একটি স্বদেশপ্রেমের পটভূমিতে নির্মিত, যেখানে এইসব চরিত্রগুলি ভারতমাতার পরাধীনতার মুক্তির চেষ্টায় নিয়োজিত। সব্যসাচী যেন তাদের মধ্যে আদর্শ বিপ্লবী প্রাণপুরুষ।

সব্যসাচীর চরিত্র সম্পর্কে কোনও আভাস পাঠ্যাংশে সেভাবে পাওয়া না গেলেও অপূর্বর চরিত্রে যে গভীর স্বদেশপ্রেম এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তা ভোলার নয়। ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়ে বেঁচে থাকা, প্রতিবাদ না করা অপূর্বর কাছে ভীরুতা। শুধুমাত্র ভারতীয় হওয়ার কারণে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তৎকালীন পরাধীন দেশের সামাজিক ছবির সামান্য নিদর্শন পাওয়া যায়। যুগ সচেতন লেখক শরৎচন্দ্র তাঁর এই রচনাতেও সেই যুগের ছবি তুলে ধরেছেন।

ভারতমাতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য বিপ্লবীরা যে প্রত্যয়ী তা এই পাঠ্যাংশ থেকেই পরোক্ষভাবে জানা যায়। ব্রিটিশ পুলিশ দেশীয় গুপ্তচরদের কাজে লাগিয়ে তাদের ধরার জন্য সদা ব্যস্ত থাকত। সব্যসাচী মল্লিকও তাদের কাছে সন্দেহভাজন ব্যক্তি। সব্যসাচীর আসার খবরকে কেন্দ্র করে গল্পে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।

অপূর্বর চরিত্রে দেশের প্রতি সৎ আবেগ, ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে জমে ওঠা ক্ষোভ, নিমাইবাবুর ভারতীয় হয়েও একজন ভারতীয় বিপ্লবীকে খুঁজে বের করার নীচ মানসিকতা, এমনকি রামদাস তলওয়ারকরের স্বাধীনতার বোধ—সব মিলিয়ে আলোচ্য পাঠ্যাংশটি সমকালীন রাজনৈতিক পটভূমিকে প্রকাশ করে।

শ্রীকান্ত: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

উপ্যাস শ্রীকান্ত

আজ পড়লাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস *শ্রীকান্ত*। ১৯১৭ সালে ভারতবর্ষ পত্রিকায় “শ্রীকান্তের ভ্রমণকাহিনী” নামে এই লেখা প্রথম প্রকাশিত হতে শুরু করে এবং মোট চারটি উপন্যাস সমাপ্ত হয়। প্রায় ১০০ বছর আগে লেখা হলেও এর লেখনীর গুণে এই উপন্যাস এখনও আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে। চলুন পরিচিত হই এই উপন্যাসের কিছু চরিত্র এবং বিষয়বস্তুর সাথে।

”শ্রীকান্ত” উপন্যাসটি শ্রীকান্তের জবানীতেই লেখা হয়েছে। উপন্যাসের শুরুতে শ্রীকান্ত তার ভবঘুরে জীবনের শেষভাগে এসে পৌঁছেছে। সে ফিরে দেখছে তার বাল্যকাল, কৈশোর ও অতীত জীবনকে। সে অনুভব করছে তার জীবন যেন মস্ত এক চিঠিতে ভরা। আত্মীয়-স্বজনেরা সবসময় তাকে ছোট নজরেই দেখেছে। শ্রীকান্ত ভবঘুরে এবং সংসারধর্ম সেভাবে কখনো পালন করেনি।

বুদ্ধি থাকলেও বিষয়ে লোকেরা তাকে সুবুদ্ধি বলে না। সমাজের আর পাঁচজন লোকের থেকে শ্রীকান্ত এরকম ভিন্ন হল কিভাবে? তা বুঝতে আমাদের ফিরে যেতে হবে তার ছেলেবেলায়, জানতে হবে তার আদর্শ ইন্দ্রনাথের কথা। ইন্দ্রনাথের সাথে তার আলাপ একটি ফুটবল ম্যাচে। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে সেই ম্যাচ চলাকালীন কোন কারণে উভয়পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয় এবং অচিরেই তাদের সমর্থকদের মধ্যে মারপিট লেগে যায়। এই গণ্ডগোলের মধ্যে ২৭ জন ছেলে মিলে শ্রীকান্তকে ঘিরে ধরে মারতে যাবে, এমন সময় দেবদূতের মতো ইন্দ্র সেখানে এসে হাজির হয় এবং শ্রীকান্তকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে।

এরপর একদিন পিসিমার বাড়িতে মেজদার কঠোর তত্ত্বাবধানে রাতের বেলায় শ্রীকান্তরা পড়াশোনা করছিল, তখন হঠাৎ করেই বাঘের হালুম ডাক শুনে বাড়িতে হুলুস্থুল পড়ে যায়। ভয়ের চোটে বাতি উলটে পুরো বাড়ি অন্ধকারে ডুবে যায়। কেউ কিছু করতে পারছিল না। ঠিক তখনই ইন্দ্রনাথ এসে পুরো ব্যাপারটা সামাল দেয়। সাহসে ভর করে একটি বাতি হাতে নিয়ে সে একাই ডালিম গাছের কাছে এগিয়ে যায় এবং আবিষ্কার করে যে ওটা আসলে বাঘ নয়, শ্রীনাথ বহুরূপী বাঘের বেশে খেলা দেখাতে এসেছিল। এভাবে লেখক একটি মজার ঘটনা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।

ইন্দ্রনাথ সৃষ্টি ছাড়া ছেলে ছিল। পড়াশোনায় তার মন ছিল না। সারাদিন টো-টো করে ঘুরে বেড়ানো, সিগারেট খাওয়া—এই ছিল তার অভ্যাস। তবে তার ছিল বিশাল সাহস। মাঝে মাঝে শেষ রাতের বেলা ছোট্ট ডিঙি চেপে গঙ্গাবক্ষে পাড়ি দিত। ইন্দ্রনাথের ভয়ডরহীনতার জন্য শ্রীকান্তর মনে এক দুরন্ত আকর্ষণ জন্মায়। তাকেই সে নিজের গুরু বলে মেনে নেয়। অচিরেই দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একদিন ইন্দ্র তার অ্যাডভেঞ্চারে শ্রীকান্তকে ডেকে নেয়, সাপ, বন্য শুয়োর, জেলেদের তাড়া ইত্যাদি তাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে।

ভূতের ভয় কাটিয়ে তারা সারারাত ধরে ডিঙিতে চেপে জেলেদের থেকে মাছ চুরি করে। সেই টানটান নৈশ অভিযানের বর্ণনা পাঠককে রোমাঞ্চিত করবে। কিন্তু এই চুরি তারা নিজেদের জন্য করেনি, বরং অন্য এক গরীব দুঃখী পরিবার, অন্নদা দিদির জন্য করেছিল। শ্রীকান্তের চোখে অন্নদা দিদি যুগ-যুগান্তর ব্যাপী এক কঠিন থেকে কম কিছু নন। অন্যদিকে, দুই বোনের কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তাদের পিতা একটি দরিদ্র বালককে পুত্রস্নেহে নিজ গৃহে পালন করেছিলেন, যার সাথে অন্নদা দিদির বিবাহ হয়। কিন্তু সেই ছেলে এক রাতে অন্যদের বিধবা দিদিকে খুন করে পালিয়ে যায়। সাত বছর পরে মুসলমান সাপুড়ের বেশে সে আবার ওই বাড়িতে ফিরে আসে। আর কেউ চিনতে না পারলেও অন্নদা দিদির চোখে তিনি ফাঁকি দিতে পারেননি। একদিন মাঝরাতে খিড়কি দরজা দিয়ে অন্নদা দিদি তার সেই স্বামীর সাথে গৃহত্যাগ করেন।

সবাই ভাবল অন্নদা গৃহ ত্যাগ করেছে। কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে অন্নদা পাড়ি দিলেন এক অনিশ্চিত জীবনে। কিন্তু তার স্বামী ভালো নয়, গাজা, জুয়ো, মদের নেশায় সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। আর তার সাথে ছিল মারধর। অথচ কোন অভিযোগ না করে নীরবে অন্নদা দিদি সব অপমান মুখ বুঝে সহ্য করতেন। কড়ি চালানো, মরা বাঁচানো এসব বিদ্যা শিখিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সহজেই ইন্দ্রর কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করতেন। শেষে আর থাকতে না পেরে অন্নদা দিদি একদিন ইন্দ্রকে সব সত্যি কথা বলে দেন। এসব বিদ্যা আসলে ভণ্ডামি। ইন্দ্র অত্যন্ত রেগে গিয়ে তাদের সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করে। কিছুদিন পরে সহজীও সাপের কামড়ে মারা যান। বিপদের দিনে আগের মান-অভিমান সব ভুলে গিয়ে ইন্দ্র ও শ্রীকান্ত সৎকারের ব্যবস্থা করেন।

সহজির করে রাখা ঋণ শোধ করে মাত্র ২২টি পয়সা অবলম্বন করে অন্নদা দিদি চিরকালের জন্য সেই জায়গা ছেড়ে চলে যান। তবে যাবার আগে তার অতীত জীবনের কথা চিঠি লিখে শ্রীকান্তকে জানিয়ে যান। তার সতীত্ব ও সহ্যশক্তির গুণে অন্নদা দিদি শ্রীকান্তের মনে চিরকালের জন্য এক সম্মানের আসন দখল করে নিয়েছিলেন। শ্রীকান্ত লিখছেন, “নারীর কলঙ্ক আমি সহজে প্রত্যাশা করতে পারি না, আমার দিদির কথা মনে পড়ে। যদি তার ভাগ্যে এত বড় দুর্নাম ঘটতে পারে, তখন সংসারে আর কী হতে পারে না?” কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে শ্রীকান্ত কিছুতেই বুঝতে পারেন না সেই অনর্থক কষ্ট সহ্য করার সার্থকতা কী। যে লোকটি দিদিকে হত্যা করল, হয়তো অবৈধ সম্পর্কের জন্যই। তার জন্য নিজের মা-বাবা, বাড়ির সবকিছু ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া। অন্নদা কোন মানসিক পরিস্থিতিতে কাজ করেছিলেন তা বোঝা এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে সত্যিই কঠিন। যাই হোক, তারপর বেশ কিছু সময় বয়ে গেছে।

শ্রীকান্ত যৌবন অর্পণ করেছেন সেই সময়ে এক রাজার ছেলের নিমন্ত্রণে তার শিকার পার্টিতে গিয়ে হাজির হন। খাওয়া-দাওয়া, সুরা পান, নাচ-গান—সব মিলিয়ে এক এলাহি আয়োজন ছিল সেখানে। সেখানেই দেখা হয় পিয়ারী বাইজির সাথে। বাইজি যেন তার জন্যই মনঃপ্রাণ ঢেলে সারারাত ধরে তাকে গান শোনায়। আসর ভেঙে যাবার পরে বাইজি নিতান্ত আপনজনের মতো শ্রীকান্তকে শাসন করে বলে, “টাকা নিয়েছে, আমাকে তো গাইতেই হবে। কিন্তু আপনি এই পনেরো-ষোলো দিন ধরে এ মোসাহেবি করবেন। জান, কালকে বাড়ি চলে যান।” শ্রীকান্ত অত্যন্ত অবাক হয়ে যায়। বাইজি তাকে তার মা-বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু শ্রীকান্ত কিছুতেই বুঝতে পারে না আসলে সে বাইজি কে।

পরের দিন প্রসঙ্গক্রমে ভূত আছে কি নেই এই তর্ক শুরু হলে শ্রীকান্ত জোর গলায় বলে যে তার ভূতে বিশ্বাস নেই এবং প্রমাণ স্বরূপ সে অমাবস্যার রাতে অন্ধকারে একাই শ্মশানে সারা রাত কাটাবার প্রতিজ্ঞা করে।

তেওয়ারি বাইজি তাকে নানাভাবে নিরস্ত করার চেষ্টা করে। শ্রীকান্ত তার কথা শোনে না বটে, কিন্তু কথার মাঝে চিনতে পারে পিয়ারী আসলে কে। সে বুঝতে পারে পিয়ারী হল রাজলক্ষ্মী। ছোটবেলায় এই দুজনের মধ্যে বিশেষ এক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু হায়রে তখনকার সমাজ! রাজলক্ষ্মী আর তার বোন সুরলক্ষী বিয়ের যোগ্য হলে, এক বৃদ্ধ কুলীন ব্রাহ্মণের সাথে একই রাতে দুই বোনের নগদ ৭০ টাকার বিনিময়ে বিয়ে হয়ে যায়। সুরলক্ষী রোগে ভুগে মারা যায়, আর রাজলক্ষ্মীর মা গ্রামের সবাইকে রটিয়ে দেন, রাজলক্ষ্মী কলেরায় ভুগে কাশিতে মারা গেছে। সেই রাজলক্ষ্মী তার বাল্যপ্রেমের কথা এখনো ভুলতে পারেনি। দেখামাত্র শ্রীকান্তকে চিনতে পেরেছে। শ্রীকান্ত অবাক হয় এই ভেবে যে বাইজির পেশায় থেকে এত ছলাকলা ও অভিনয়ের মধ্যেও রাজলক্ষ্মী কীভাবে ছোটবেলার সেই নিষ্কলুষ ভালোবাসাকে এত দিন জিয়ে রেখেছিল।

যাইহোক, শ্রীকান্ত সেই শ্মশান থেকে বেঁচে ফিরে আসে এবং পরের দিন রাজলক্ষ্মীর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় প্রতিজ্ঞা করে যে কখনও কোন বিপদে পড়লে সে অবশ্যই রাজলক্ষ্মীকে স্মরণ করবে। আগেই বলেছি, শ্রীকান্ত ছিল ভবঘুরে, বাড়ির টান তার কোনোদিনই ছিল না। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই সে আবার বেরিয়ে পড়ল। এবার যোগ দিল এক সন্ন্যাসীদের দলে। গেরুয়া বস্ত্র, রুদ্রাক্ষের মালা, কপালে ছাই মেখে বিহারী গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা চেয়ে ভক্তদের দেওয়া নানাবিধ প্রণামিতে তার দিন ভালই কাটছিল। এমন সময় দেখা দিল বসন্ত রোগের প্রকোপ। মহামারীর আকার নিলে সন্ন্যাসীরা সেই স্থান ত্যাগ করেন। কিন্তু এক বাঙালি ভক্তের অনুরোধে তাদের সন্তানের সেবা-শুশ্রূষার জন্য শ্রীকান্ত সেখানে থেকে যায়। তারা সুস্থ হয়ে যায়, কিন্তু ততদিনে শ্রীকান্ত আবার জ্বরে পড়ে।

অকৃতজ্ঞ সেই পরিবার অসুস্থ শ্রীকান্তকে একা ফেলে রেখে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে সেইদিনই স্থান ত্যাগ করে। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোনক্রমে শ্রীকান্ত আরা স্টেশনে পৌঁছায় এবং রাজলক্ষ্মীকে একটি টেলিগ্রাম পাঠায়। দেরি না করে রাজলক্ষ্মী এসে শ্রীকান্তকে তার বাড়ি পাটনায় নিয়ে যায় এবং দিনরাত সেবা করে তাকে সুস্থ করে তোলে। তবে শ্রীকান্ত সেবারে বসন্ত নয়, অন্য কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। সেখানে তার আলাপ হয় রাজলক্ষ্মীর সতীনপো বঙ্কুর সঙ্গে। বঙ্কু বাঁকি-পুর কলেজে পড়ে এবং রাজলক্ষ্মী তাকে নিজের ছেলের মতই ভালবাসে।

শরীর খানিক সুস্থ হলে রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্তকে বলে, “যাবে কবে ভাবছ? আমার ছেলে প্রায়ই আজকাল বাঁকি-পুর থেকে এসে থাকে। বেশি দিন থাকলে সে হয়তো কিছু ভাবতে পারে।” এই কথার পরে আর সেখানে থাকা সম্ভব হয় না। শ্রীকান্ত বুঝতে পারে যে রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত যতই একে অপরকে কামনা করুক না কেন, এ মুহূর্তে রাজলক্ষ্মী বঙ্কুকে নিজের ছেলে বলে মেনে নিয়েছে। মা হওয়ার পর থেকে তার উপর অযাচিত দায়িত্ব এসে পড়েছে।

রাজলক্ষ্মীর প্রেমিকা সত্ত্বার চেয়ে তার মাতৃ সত্ত্বা বড়ো হয়ে উঠেছে। শ্রীকান্তকে গ্রহণ করতে গেলে সে কিছুতেই বঙ্কুর কাছে ছোট হতে পারবে না। তাই আবার শ্রীকান্ত এবং রাজলক্ষ্মীর পথ আলাদা হয়ে যায়। লেখক লিখছেন, “বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, ইহা দূরেও ঠেলে ফেলে।”

বন্ধুত্ব, প্রেম, স্নেহ, হাসি—এই চিরায়ত অনুভূতিগুলির মায়ায় উপন্যাসটি আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা, বিশেষ করে মেয়েদের করুণ অবস্থা, আমরা উপলব্ধি করতে পারি। বাল্যবিবাহ, জাতিভেদ প্রথা সমাজ ব্যবস্থাকে তখন ভেতর থেকে নষ্ট করে দিচ্ছিল। শ্রীকান্তের মনে এসব অনর্থক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জেগে উঠলেও সে কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে প্রতিকার করতে আসে না। বরং কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দর্শকের মতো এসব লিপিবদ্ধ করে রাখে। সব মিলিয়ে, *শ্রীকান্ত* একটি অনবদ্য উপন্যাস।

আরো পড়ুন: Dr. Muhammad Yunus Biography

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক অমর লেখক। তার লেখনী থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে চাকরির পরীক্ষায় ভালো করা। আশা করছি, সামনের পরীক্ষাগুলোতে তোমরা সবাই খুব ভালো করবে।

FAQ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার পার্ক নার্সিংহোমে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যু হয়। 
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাসের নাম বড়দিদি।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম অনিলা দেবী।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ২৪ টি উপন্যাস, ১১ টি ছোটগল্প, ৪ টি নাটক ও ১২ টি প্রবন্ধ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ২৪ বছর বয়সে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন।


S.M. Rokibul Kabir
S.M. Rokibul Kabir

S.M. Rokibul Kabir is the author of BD JOBZ PREPARATION. He is from Rajshahi, Bangladesh. He has completed Honors and Masters degrees from Rajshahi University in English. Now he is doing LLB from National University. He has been teaching English online for more than three years. His hobby is blogging.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Table of Content