বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : জীবনী ও উপন্যাস

Feature Image বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : জীবনী ও উপন্যাস


বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিসিএস (BCS), বিজেএস (BJS) এবং অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার সিলেবাসের অন্তর্গত একজন সাহিত্যিক।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য

প্রায় প্রতিটি প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্র থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। তাই আজকে আমর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং তার সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জানব, যেন পরীক্ষায় আমরা ভালো করতে  পারি।

আরো পড়ুন: Floods in Bangladesh Composition

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩৮ সালের ২৭ জুন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণার অন্তর্গত কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তিনি গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি পেশা জীবন শুরু করেন  ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হন। তিনি বহুমূত্র রোগের একজন রোগী ছিলেন। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে তাঁর বহুমূত্র রোগ বেড়ে যায়। অবশেষে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। বাংলা গদ্যের বিকাশে তার অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য। তিনি বাংলা সাহিত্য ধারার প্রতিষ্ঠাতা পুরুষদের মধ্যে অন্যতম। বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক বাংলা সাহিত্যের। তাঁকে বাংলার স্কটও বলা হয়। পাশ্চাত্য আদর্শে বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম উপন্যাস রচনা করেন। তাকে ‘সাহিত্য সম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বঙ্গদর্শন (১৮৭২) পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস ও প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্য কর্মের তালিকা নিচে দেয়া হলো:

কাব্যগ্রন্থ: ললিতা তথা মানস

উপন্যাস: Rajmohan’s wife; দুর্গেশনন্দিনী; কপালকুণ্ডলা; কৃষ্ণকান্তের উইল; রজনী; বিষবৃক্ষ; রাজসিংহ; মৃণালিনী; অনন্দমঠ; সীতারাম; দেবী চৌধুরাণী।

প্রবন্ধগ্রন্থ: কমলাকান্তের দপ্তর; সাম্য; লোকরহস্য; বিবিধ প্রবন্ধ; ধর্মতত্ত্ব।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক। বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য আদর্শ তিনিই নিয়ে আসেন। তার বিখ্যাত কিছু উপন্যাস নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল:

দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫খ্রি.)

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম বাংলা উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী। বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী। উপন্যাসের নাম অর্থাৎ ‘দুর্গেশনন্দিনী’  নামের অর্থ দুর্গ প্রধানের কন্যা।

প্রধান চরিত্র: আয়েশা, তিলোত্তমা

সারসংক্ষেপ: দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের পটভূমি রচিত হয় মোঘল ও পাঠানদের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে। উড়িষ্যা অধিকারকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষ। সময়টা ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগ। দিল্লীশ্বরের প্রধান সেনাপতি অম্বররাজ মানসিংহের পুত্র কুমার জগৎ সিংহ। তিনি বিষ্ণুপুর থেকে মান্দারণ যাত্রাকালে ঝড়ের কবলে পড়েন। এসময় তিনি একটি মন্দিরে আশ্রয় নেন। সেখানে তার সাথে সাক্ষাৎ হয় মান্দরণ দুর্গাধিপতি জয়ধর সিংহের একমাত্র পুত্র মহারাজ বীরেন্দ্র সিংহের স্ত্রী ও কন্যা, দুর্গেশনন্দিনী তিলোত্তমার সঙ্গে। এখানে জগৎ সিংহ ও তিলোত্তমা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন।

পরবর্তীতে পাঠান সেনাপতি ওসমান খাঁ মান্দারণ দুর্গ অধিকার করেন। বীরেন্দ্র সিংহ, তাঁর স্ত্রী বিমলা, কন্যা তিলোত্তমা ও কুমার জগৎ সিংহকে বন্দী করা হয়। পরে পাঠান নবাব কতলু খাঁ বীরেন্দ্র সিংহকে হত্যা করে। নিহত বীরেন্দ্র সিংহের স্ত্রী কতলু খাঁকে হত্যা করে স্বামী হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করেন।

কুমার জগৎ সিংহের মাধ্যমে পাঠানেরা অম্বররাজ মানসিংহ তথা দিল্লীশ্বরের সাথে সন্ধি স্থাপন করেন। অন্যদিকে কতলু খাঁর কন্যা নবাবজাদী আয়েশা জগৎ সিংহের প্রেমে পড়েন। আয়েশার প্রণয়ী পাঠান সেনাপতি একথা জেনে ফেলেন। সে ক্রোধে কুমার জগৎ সিংহের সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পরিশেষে মান্দারণ আবার স্বাধীন হয়। মহারাণী বিমলার হাতে রাজ্যপাঠ হস্তান্তরিত হয়। এরপর মহানন্দে কুমার জগৎ সিংহ ও দুর্গেশনন্দিনী তিলোত্তমার মিলন ঘটে।

কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬ খ্রি.)

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত কপালকুণ্ডলা বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক বা রোমান্সধর্মী উপন্যাস। কপালকুণ্ডলা নামের অর্থ হতভাগিনী।

চরিত্র: কপালকুণ্ডলা, নবকুমার

সারসংক্ষেপ: উপন্যাসের সময়টা সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়কাল। উপন্যাসের নায়ক সপ্তগ্রামের অধিবাসী নবকুমার শর্মা। নবকুমারের প্রথম স্ত্রী পদ্মাবতী। সুন্দরী পদ্মাবতী পূজা পরিদর্শন শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাঠান মুসলমান দস্যু কর্তৃক আক্রান্ত ও বন্দী হয়। পরে জাতধর্ম বিসর্জন দিয়ে মুসলমান হয়ে নাম ধারণ করে লুৎফুন্নেসা। জাতধর্ম বিসর্জন দেয়ায় নবকুমার তার স্ত্রী পদ্মাবতীকে পরিত্যাগ করে। স্ত্রী পরিত্যাগ করে নবকুমার তীর্থে তীর্থে ভ্রমণ করে বেড়ায়।

এক তীর্থে গিয়ে নবকুমার জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করার জন্য জঙ্গলে যায়। তার সঙ্গীরা তখন নৌকায় অবস্থান করছিল। জঙ্গল থেকে ফিরতে দেরি হওয়াই, তার সঙ্গীরা ভাবে যে নবকুমারকে বাঘে খেয়েছে। তাই নবকুমারকে জঙ্গলের ভেতর রেখেই তারা চলে গেলেন। অন্যদিকে জঙ্গলের ভেতর পথ হারিয়ে নবকুমার চলে যান সমুদ্রের তীরে। জনমানব শূন্য সমুদ্রের তীরে নবকুমারের সাথে দেখা হয় এক নারীর, এই নারীই হল এই উপন্যাসের নায়িকা কপালকুণ্ডলা।

কপালকুণ্ডলা এই বনের ভেতরেই থাকে। শিশুকালে ব্রাক্ষণ কন্যা কপালকুণ্ডলা এক ইংরেজ কর্তৃক চুরি হয়েছিল। ঐ ইংরেজ কপালকুণ্ডলাকে নিয়ে ইংল্যান্ড যাচ্ছিল। পথে জাহাজ নষ্ট হলে, সাগরতীরে কপালকুণ্ডলাকে রেখেই সে চলে যায়। সাগরতীর থেকে কপালকুণ্ডলাকে এক মন্ত্রসাধক তার ঘরে নিয়ে যান। এই মন্ত্রসাধকের নাম কাপালিক। সে বাঘের চামড়া পরিধান করে এবং মরা দেহের ওপর বসে। সে দেবী ভৈরবীর পূজা করে। এই মন্ত্রসাধকের ঘরেই বেড়ে ওঠে কপালকুণ্ডলা।

পথ হারানো নবকুমারকে নিয়ে কপালকুণ্ডলা কাপালিকের ঘরে আসেন। কাপালিকের ঘর ছিল গভীর অরণ্যে। নবকুমার ছিল জাতে ব্রাক্ষণ। একথা শুনে কাপালিক তাকে দেবী ভৈরবীর পায়ে বলি দিতে চায়। একথা বুঝতে পেরে কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে নিয়ে দূরে এক মন্দিরে চলে আসেন। এই মন্দিরের পুরোহিত নবকুমার ও কপালকুণ্ডলার বিবাহ দেন।

নববধূ কপালকুণ্ডলাকে নিয়ে নবকুমার সপ্তগ্রামের দিকে যাত্রা করে। পথিমধ্যে তারা এক আশ্রয়স্থলে উঠেন। এই একই আশ্রয়স্থলে আশ্রয় নেয় নবকুমারের আগের স্ত্রী পদ্মাবতী। বহুদিন পর স্বামীকে দেখে তাকে পাওয়ার প্রত্যাশা জাগে পদ্মাবতীর। কিন্তু এ আশা ভেঙে যায় নববধূ কপালকুণ্ডলাকে দেখে। নবকুমার ও পদ্মাবতীর মিলনের মাঝে পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় কপালকুণ্ডলা। তাই পদ্মাবতী কপালকুণ্ডলাকে সরাতে চায়। অন্যদিকে মন্ত্রসাধক কাপালিক নবকুমার ও কপালকুণ্ডলার খোজে সপ্তগ্রামের দিকে আসে। এ দিকে পদ্মাবতীর সাথে দেখা হয়ে যায় কাপালিকের। তারা দুইজন মিলেই এখন কপালকুণ্ডলাকে বধ করার নীল নকশা আটে।

ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একদিন কাপালিক নবকুমারকে দেখিয়ে দেয় যে, বনের ভেতরে কপালকুণ্ডলা এক যুবকের সাথে প্রেম করছে। আসলে এ যুবকটি ছিল পদ্মাবতী। সে যুবক সেজে ছলনা করে কপালকুণ্ডলাকে বনে আনে। এ দৃশ্য দেখে নবকুমার ক্রোধে কপালকুণ্ডলাকে বধ করার কাজটি নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেয়। সপ্তগ্রামের পাশে শ্বশান ভূমিতে বধের আয়োজন করা হয়। বধের পূর্বে নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে নিয়ে গেল সমুদ্রতীরে স্নান করানোর জন্য। এসময় কথোপকথনের মাধ্যমে নবকুমার বুঝতে পারলো কপালকুণ্ডলার কোন দোষ নেই। তার মধ্যে পাপ নেই। সে পবিত্র। সে কপালকুণ্ডলাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে চাইলো। কিন্তু কপালকুণ্ডলা ফিরতে চাইলো না। যে নবকুমারকে বিশ্বাস করে, কপালকুণ্ডলা কাপালিকের হাত থেকে তাকে বাঁচালো। আর সেই নবকুমারই তাকে বধ করতে চাইলো। তাই সে আর নবকুমারের সাথে ফিরবে না। এ কথোপকথনের মাঝেই পাড় ভেঙে পানিতে পড়ে গেল কপালকুণ্ডলা। আর তাকে বাচাতে পানিতে ঝাপ দিলো নবকুমার। দুইজনেরই সলিল সমাধি ঘটলো।

কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮ খ্রি.)

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস কৃষ্ণকান্তের উইল। এটি একটি সামাজিক/পারিবারিক উপন্যাস। উপন্যাসের নায়িকা স্বীয় ব্যর্থ জীবনের হাহাকারের জন্য আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। দুই খণ্ড বিশিষ্ট উপন্যাসটির প্রথম খণ্ডে ৩১টি পরিচ্ছেদ এবং ২য় খণ্ডে ১৬টি পরিচ্ছেদ আছে।

প্রধান চরিত্র: গোবিন্দলাল ও রোহিণী।

সারসংক্ষেপ: উইল শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘ইচ্ছাপত্র’। উপন্যাসে হরিয়ার গ্রামের দুভাই কৃষ্ণকান্ত ও রামকান্ত। তাদের জমিদারি ছিল। পুরো জমিদারি বড় ভাই কৃষ্ণকান্তর নামেই ছিল। কারণ দুই ভাইয়ের মাঝে ছিল খুব ভালো সম্পর্ক। কৃষ্ণকান্তের দুই পুত্র ছিল। বড় পুত্র হরলাল। সে ছিল পিতার অবাধ্য। ছোট পুত্র বিনোদলাল। আর ছোট ভাই রামকান্তের একটি পুত্র, গোবিন্দলাল। তার স্ত্রীর নাম ‘ভ্রমর’। ছোট ভাই রামকান্তের আকস্মিক মৃত্যু হলে তার বড় ভাই তার সব সম্পত্তি উইল করলেন এভাবে – কৃষ্ণকান্তের মৃত্যুর পর তার ভাইপো গোবিন্দলাল পাবে ৮ আনা সম্পত্তি। বাকি ৮ আনার মধ্যে তার পুত্র হরলাল পাবে ৩ আনা, ছোট পুত্র পাবে ৩আনা এবং স্ত্রী ও কন্যা পাবে ১ আনা করে।

এই ধরনের উইল দেখে কৃষ্ণকান্তের বড় ছেলে হরলাল অসন্তুষ্ট হল। সে চাইতো তার নামে যেন অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়া হয়। হরলাল হুমকি দেয় যদি তার বাবা তার নামে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে না দেয় তাহলে সে বিধবা বিবাহ করে বংশের নাম নষ্ট করবে। হরলালের একথা শুনে কৃষ্ণকান্ত দ্বিতীয়বার উইল লেখেন, যেখানে হরলালের কোন অংশই থাকলোনা।

কৃষ্ণকান্ত তার ভাইপোকে খুবই পছন্দ করতেন। তার মতে তার ভাইপো ছিল শুদ্ধ চরিত্রর অধিকারী। কিন্তু এ গোবিন্দলালের চরিত্রের অবনতি ঘটে। সে গ্রামের এক বিধবাকে ভালোবাসতো। যার নাম ছিল রোহিণী। গোবিন্দলালের স্ত্রী ভ্রমর মায়ের অসুস্থতার কারণে বাবর বাড়ি গেলে, এ ফাকে গোবিন্দলাল যুবতি রোহিণীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। গোবিন্দলালের এমন নৈতিক স্খলনে কৃষ্ণকান্ত মনে অনেক কষ্ট পায়। এর ফলে চতুর্থ-বার বা শেষ বারের মতো কৃষ্ণকান্ত উইল লেখেন।

নৈতিক স্খলনের কারণে সেখানে গোবিন্দলালের নাম কেটে ভাইপোর স্ত্রী ভ্রমরের নাম লেখা হয়। কিছু দিন পর কৃষ্ণকান্ত মারা যান। অন্যদিকে গোবিন্দলাল যশুরে একটি নীলকুঠি কিনে সুখে ঘর বাধতে চেয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর গোবিন্দলাল বুঝতে পারলো এ  যুবতি চরিত্রহীন। এখন রোহিণী গোবিন্দলালকে বাদ দিয়ে সুদর্শন পুরুষ নিশাকরকে পেতে চায়। তাই গোবিন্দলাল রোহিণীর উপর ক্ষিপ্ত হয়। ক্ষোভে গোবিন্দলাল  রোহিণীকে গুলি করে হত্যা করে।

হত্যার দায়ে পুলিশ গোবিন্দলালকে গ্রেপ্তার করলে, তার শ্বশুর অর্থাৎ ভ্রমরের বাবা মিথ্যা স্বাক্ষী সাজিয়ে তাকে জেল থেকে বের করে নিয়ে আসে। দীর্ঘ সাত বছর পর গোবিন্দলাল তার নিজ গ্রাম ও স্ত্রী ভ্রমরের কাছে ফিরে আসে। এসে দেখে স্বামীর অপেক্ষায় অসুস্থ হয়ে ভ্রমর এখন মৃত্যু শয্যায়। কিছু দিন পর সে মারা যায়। ভ্রমরের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করে পাগলের মতো গৃহ ত্যাগ করে গোবিন্দলাল।

গৃহত্যাগের বারো বছর পর সে আবার বাড়ি ফিরল। কিন্তু তাকে দেখে কেউ চিনতে পারলো না। সে দেখল যে, তার বাড়ির উঠানে একটি মন্দির। আর সে মন্দিরে তার স্ত্রী ভ্রমরের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। সবাই যখন জিজ্ঞাসা করলো, তুমি কে? সে তার নিজের পরিচয় দিলো। সবাই ভাবলো গোবিন্দলাল ফিরে এসেছে। কিন্তু না পরদিন কাউকে কিছু না বলে গোবিন্দলাল আবার গৃহ ত্যাগ করে। এরপর কেউ আর তাকে কোনদিন দেখেনি।

একজন লেখক লিখছেন

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় প্রশ্ন এসে থাকে। বিগত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্র থেকে যেসকল প্রশ্ন এসেছে তা নিচে আলোচনা করা হল। প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হল:

(১) ‘কাঁঠালপাড়া’য় জন্মগ্রহণ করেন কোন লেখক?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(২) বঙ্কিমচন্দ্র পেশাজীবন শুরু করেন কি হিসেবে?

উত্তর: ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ।

(৩) বাংলা সাহিত্যধারার প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ কে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৪) ’সাহিত্য সম্রাট’ নামে বিখ্যাত বাংলা লেখক কে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৫) ‘বাংলার স্কট’ বলা হয় কাকে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্রকে।

(৬) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক কে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৭) বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য আদর্শে প্রথম সার্থক উপন্যাস রচয়িতা কে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৮) বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস কোনটি?

উত্তর: Rajmohan’s wife.

(৯) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত প্রথম উপন্যাস কোনটি?

উত্তর: দুর্গেশনন্দিনী।

(১০) বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক উপন্যাস কোনটি?

উত্তর: দুর্গেশনন্দিনী।

(১১) প্রথম প্রকৃত বাংলা উপন্যাস কোনটি?

উত্তর: দুর্গেশনন্দিনী।

(১২) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ কত সালে প্রকাশিত হয়?

উত্তর: ১৮৬৫ সালে।

(১৩) ‘দুর্গেশনন্দিনী’ শব্দের অর্থ কি?

উত্তর: দুর্গ প্রধানের কন্যা।

(১৪) বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’ এর রচয়িতা কে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(১৫) ‘কপালকুণ্ডলা’ কোন প্রকৃতির রচনা?

উত্তর: রোমান্সমূলক উপন্যাস।

(১৬) কোনটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রোমান্টিক উপন্যাস?

উত্তর: কপালকুণ্ডলা।

(১৭) ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ?’ কথাটি কার?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(১৮)  ‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?’ উদ্ধৃতাংশটুকু কোন গ্রন্থের?

উত্তর: কপালকুণ্ডলা।

(১৯) ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের নায়কের নাম কি?

উত্তর: নবকুমার।

(২০) ‘নবকুমার’ কোন উপন্যাসের চরিত্র?

উত্তর: কপালকুণ্ডলা।

(২১) ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ’ কে কাকে বলেছিল?

উত্তর: কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে।

(২১) ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ’ উদ্ধৃতাংশের পথিক কে?

উত্তর: নবকুমার।

(২২) ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?’ কোন উপন্যাস থেকে উৎকলিত?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’।

(২৩) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ উপন্যাসের প্রধান দুটি চরিত্রের নাম কি?

উত্তর: গোবিন্দলাল ও রোহিণী।

(২৪) ‘রোহিণী কোন উপন্যাসের নায়িকা?

উত্তর: কৃষ্ণকান্তের উইল।

(২৫) ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ এ রোহিণী আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল কেন?

উত্তর: স্বীয় ব্যর্থ জীবনের হাহাকারে।

(২৬) ‘রোহিণী-বিনোদিনী-কিরণময়ী’ কোন গ্রন্থ-গুচ্ছের চরিত্র?

উত্তর: কৃষ্ণকান্তের উইল-চোখের বালি-চরিত্রহীন।

(২৭) ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসটির রচয়িতা কে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(২৮) সীতারাম কি ধরনের উপন্যাস?

উত্তর: রাজনৈতিক উপন্যাস।

(২৯) ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি কার লেখা?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৩০) ঐতিহাসিক উপন্যাস কোনটি?

উত্তর: রাজসিংহ।

(৩১) ‘রাজসিংহ’ উপন্যাস কার রচনা?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৩২) কোনটি সামাজিক উপন্যাস?

উত্তর: বিষবৃক্ষ।

(৩৩) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাসের চরিত্র কোনটি?

উত্তর: কুন্দ-নন্দিনী।

(৩৪) ‘যুগলাঙ্গুরীয়’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৩৫) ‘মৃণালিনী’ উপন্যাসটি কার রচনা?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৩৬) ‘ইন্দিরা’ গ্রন্থটি কার রচনা?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৩৭) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস কোনটি?

উত্তর: রজনী।

(৩৮) কোনটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা?

উত্তর: বিষবৃক্ষ।

(৩৯) ’সাম্য’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

(৪০) ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ কার লেখা?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র।

(৪১) ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ কোন শ্রেণির রচনা?

উত্তর: রম্য রচনা।

(৪২) “প্রদীপ নিবিয়া গেল!” এ বিখ্যাত বর্ণনা কোন উপন্যাসের?

উত্তর:বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’।

আরো পড়ুন: Pronouns-Definitions, Types, Examples & Uses

আমরা তাহলে এই লেখাটার মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তার সংক্ষিপ্ত সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জানলাম। আশা করি লেখাটি পড়ে চাকুরী প্রার্থীরা অনেক উপকৃত হবেন।

FAQ: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছেন। এর মধ্যে একটির ভাষা ইংরেজী। উপন্যাসগুলোর নাম হলো: Rajmohan's wife, দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, চন্দ্রশেখর, যুগলাঙ্গুরীয়, রধারাণী, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আন্দমঠ, দেবী চৌধুরাণী এবং সীতারাম।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম ছিল কমলাকান্ত।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাসের নাম দুর্গেশনন্দিনী। ১৮৬৫ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শ্রেষ্ঠ উপন্যাস কৃষ্ণকান্তের উইল।


Leave a Reply